সম্পর্কের যত্ন করি, ভালো থাকি

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা - NCTB BOOK

জন্মগ্রহণের পরে পরিবারে আমরা যাদের সাথে বেড়ে উঠি তাদের সাথেই প্রথমে আমাদের সম্পর্ক গড়ে। কেউ শুধু মা বাবার সাথে বেড়ে উঠি, কারও হয়তো ভাইবোনও থাকে। অনেকে আবার দাদা-দাদি, নানা-নানি, মামা-মামি, চাচা-চাচি, খালা-খালু, ফুফু-ফুফার মাঝেও বেড়ে উঠি। ধীরে ধীরে আমরা যখন আর একটু বড় হই, তখন প্রতিবেশী এবং বিদ্যালয়ের সমবয়সীদের সাথে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের সাথে খেলা, গল্প করা আরও কত কি করি! এভাবে সমবয়সীদের সাথে ধীরে ধীরে আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়। অনেক সময় এই সম্পর্ক এত গভীর ও আন্তরিক হয় যে সারা জীবন থাকে।

এই অধ্যায়ে সমবয়সী ও সহপাঠীদের সাথে আমাদের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক আবিষ্কার করব। আর এই আবিষ্কারের জন্য আমরা বিভিন্ন মজার মজার খেলা ও কাজে অংশগ্রহণ করব। সবাই মিলে একটি খেলা খেলব। এরপর আমাদের সমবয়সী ও সহপাঠীদের সাথে ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞতা ও তার প্রভাব খুঁজে বের করব। অতঃপর সমবয়সী ও সহপাঠীদের সাথে স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণে করনীয় এবং সবশেষে এ উপায়গুলো কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করে নিজের জীবনে চর্চা করব।

 

এবার একসাথে একটি খেলা খেলি

আমরা সবাই মিলে খেলাটিতে অংশগ্রহণ করেছি এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। এবার আমরা সমবয়সীদের সাথে আমাদের নিজেদের জীবনের স্মরণীয় ২টি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। এর মধ্যে একটি ইতিবাচক। এবং অন্যটি নেতিবাচক । তবে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখব যার সাথে এটি হয়েছে তার নাম বা পরিচয় না বলে শুধু ঘটনাটির উল্লেখ করব।

প্রথমে দলে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। এরপর শ্রেণির সবার সাথে আমাদের দলগত অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেছি। এবার আমার অভিজ্ঞতাগুলো নিচের ছকে লিখি।

আমার অভিজ্ঞতা : ছক ১

আমরা নিয়মিত সমবয়সীও সহপাঠীদের সাথে একত্রিত হই, খেলাধুলা করি, গল্পগুজব করি, পড়াশোনা করি। কখনো একসাথে বেড়াতে যাই, কখনো একসাথে নানা রকম সমস্যার সমাধানও করি। এখন আমরা এমনকিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে করব যেখানে সমবয়সীদের সাথে আমাদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা আমরা আমাদের দলের মধ্যে আলোচনা করি। এরপর যেকোনো একটি ঘটনা নিয়ে আমরা অভিনয় করে দেখাই।

সহপাঠী ও সমবয়সী সম্পর্কের শক্তি

আমরা অনেকগুলো পরিস্থিতির অভিনয় দেখলাম। অভিনয় দেখে সমবয়সীদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেকৃত ধরনের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হতে পারে তার ধারণা পেলাম। এই ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে আমাদের সম্পর্ক তৈরিতে উৎসাহ জোগায়। এর ফলে আমরা ভালো থাকি। আমরা যে ইতিবাচক দক্ষতাগুলো অর্জনকরিতা আমাদের আন্তরিকভাবে একে অপরের সাথে মিলেমিশে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

সমবয়সীদের সাথে সম্পর্কের ইতিবাচক প্রভাব

• সহযোগিতা ও সহমর্মী মনোভাব তৈরি হয়। 

• সামাজিক রীতিনীতি জানা ও মেনে চলার ক্ষেত্রে একে অপরের কাছ থেকে শেখা যায়।

• নিজের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে কোনো সমস্যা বুঝতে পারা যায়। সমস্যা সমাধানের কৌশল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 

• গভীর ও আন্তরিক বন্ধুত্ব গঠনের ক্ষেত্র তৈরি হয়। 

• খেলা, গল্প, আড্ডা-এরকম বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর ও আনন্দদায়ক উপায়ে একসাথে সুন্দর সময় কাটানো যায়। 

• নিজেদের আনন্দ-দুঃখ, পাওয়া-না পাওয়া একে অপরের সাথে সহজে শেয়ার করা যায়। 

• একে অপরের কাছ থেকে ভালো কাজের সমর্থন ও নতুন কোনো বিষয়ে উৎসাহ পাওয়া যায়। একজন আরেকজনকে দেখে কোনো বিষয়ে এগিয়ে যেতে সাহস পাই। 

• একই বয়সের বলে বেশিরভাগ সময় একে অন্যকে সহজে বোঝা যায়। সহজে মনের কথা বলা যায়। 

• নিজেদের মধ্যে সম্পর্কগুলোর যত্ন নেওয়া যায় এবং তা আরও এগিয়ে নিতে উৎসাহ কাজ করে। 

• একে অপরের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব তৈরি হয়। নিজের মতামত সহজে প্রকাশ ও অন্যের মতকে সহমর্মিতার সাথে গ্রহণ বা বর্জন করার দক্ষতা তৈরি হয়। 

• নিজেদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব বা সমস্যা তৈরি হলে তা নিয়ে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার দক্ষতা তৈরি হয়। 

• অন্যদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা ও দায়িত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়ে। 

• আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

সহপাঠী ও সমবয়সী সম্পর্কের সমস্যা

সমবয়সীদের মধ্যে সম্পর্ক কতভাবে আমাদের ভালো থাকা ও ব্যক্তিত্ব গঠনে সহযোগিতা করে তা জানলাম । তবে সমবয়সীদের সাথে আমাদের অভিজ্ঞতা যে সবসময় মধুর বা ইতিবাচক হয় তা নয়। এই অধ্যায়ের দ্বিতীয় সেশনে আমরা সমবয়সীদের সাথে নিজেদের একটি করে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। আমাদের নিজেদের বইয়ের ‘আমার অভিজ্ঞতা : ছক ১' বের করি এবং আবার ঘটনাটি মনে করি। এরকম আরও নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলে এবার তা দলে শেয়ার করি। সবার অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা দলে একটি সাধারণ তালিকা তৈরি এবং শ্রেণিকে সবার সাথেউপস্থাপন করি। তবে খেয়াল রাখব যার সাথে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়েছে তার নাম বা পরিচয় না বলে শুধু ঘটনাটির তালিকা করব। এরপর নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘আমার অভিজ্ঞতা : ছক ২' পূরণ করি। যেমন : আমার ছবি আঁকা সুন্দর হয়নি বলে কোনো এক সমবয়সী আমাকে নিয়ে বিদ্রূপ করছিল, এরপর থেকে সবার সামনে ছবি আঁকতে আমি অস্বস্তি বোধ করি ।

আমার অভিজ্ঞতা : ছক ২

নেতিবাচক অভিজ্ঞতাআমার ওপরে এর নেতিবাচক প্রভাব

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অনেক সময় সমবয়সীদের কিছু নেতিবাচক আচরণ, অঙ্গভঙ্গি বা কাজে আমরা বিব্রত বোধ করি, আহত হই। যেমন : উপহাস করা, স্কুল পালাতে বাধ্য করা, কোনো নেতিবাচক কাজ-খেলা-ছবি দেখা-ধুমপানে বাধ্য করা, কাউকে উত্ত্যক্ত করার জন্য নেতিবাচক অঙ্গভঙ্গি ও আচরণ করা। কখনো এমনও হয় যে ঘটনাটি আমার সাথে হচ্ছে না, তবে আমার পরিচিত কারওবা বন্ধুর সাথে হয়ত ঘটছে। তখন কী করব বা কাকে বলব তা বুঝতে পারি না। আবার কখনো কখনো আমাদের কোনো আচরণ যে নেতিবাচক সেটাই আমরা বুঝতে পারি না। এমনকি কখনো কখনো এমনও হয় যে আমরা বুঝতে পারি আমার আচরণ বা অঙ্গভঙ্গিটি ঠিক হচ্ছে না, তবে কীভাবে এর পরিবর্তন করতে পারি তা আমাদের জানা নেই বা বুঝতে পারি না। নিজেদের প্রতি বিশ্বাস, সম্মানবোধ ও ইতিবাচক মূল্যবোধের অভাবে আমাদের মধ্যে এমন মনোভাব তৈরি হয়। আমরা চাইলে এসব সীমাবদ্ধতা পুরোপুরি পরিবর্তন করতে পারি। তাহলে চলো, আমাদের জানা বা শোনা এই সীমাবদ্ধতাগুলোকে আমরা আগে খুঁজে বের করি।

এই কাজটির জন্য আমাদের জানা বা শোনা এমন নেতিবাচক আচরণ, অঙ্গভঙ্গি বা কাজগুলোকে লিখে শিক্ষকের দেওয়া বন্ধ বাক্সটিতে ফেলব। আমি নিজেও যদি এমন কোনো আচরণ, অঙ্গভঙ্গি বা কাজ করি যা আমি পরিবর্তন করতে চাই তাও লিখতে পারি। আমরা কেউ নিজের বা অন্যের নাম লিখব না; শুধু নেতিবাচক আচরণ, অঙ্গভঙ্গি বা কাজগুলো লিখব।

নেতিবাচক বিষয়গুলো লিখে বাক্সে ফেলার কাজটি একটি সাহস ও সততার কাজ। এটি নিজেদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়ায়। এ বিষয়গুলো জানলে আমরা নিজেদেরকে ও সহপাঠীদেরকে সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝতে ও দূর করতে সাহায্য করতে পারব। কত গুরুত্বপূর্ণও প্রশংসার একটি কাজ, তাইনা? তাহলে চলো এবার আমাদের জানা বা দেখা এ ধরনের আচরণগুলো যা কার অনুভূতিকে আঘাত করে, অসম্মান করে এবং নিজের বা অন্যের জন্য ক্ষতিকর তা লিখি। নাম উল্লেখ না করে আমরা পরবর্তী সেশনের আগে শিক্ষকের দেওয়া ‘আমাদের সীমাবদ্ধতা' বাক্সে ফেলি।

সমবয়সীদের সাথে সম্পর্কের নেতিবাচক প্রভাব

সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখার নামে বা ভয় পেয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়লে তার ফলাফলও নেতিবাচক হয়ে থাকে। যেমন

• পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজনের সাথে সমস্যা বা দূরত্ব হতে পারে। 

• মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াসহ পড়াশোনায় মনোযোগের অভাব ও ফলাফল খারাপ হতে পারে। 

• উদ্বেগ বা বিষন্নতা কাজ করতে পারে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বা প্রয়োজনে যথাযথভাবে চিকিৎসা করা না হলে কখনো কখনো নিজের বা অন্যের ক্ষতি করে ফেলতে পারি। এমনকি কারও কারও ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে। 

• পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে হতাশা থেকে কেউ কেউ সিগারেট বা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ শুরু করতে পারে।

আমরা আমাদের নিজেদের ও সহপাঠীদের যে সীমাবদ্ধতাগুলো দেখতে, বুঝতে ও শুনতে পেয়েছি সেগুলোকে সবাই লিখে শিক্ষকের কাছে দিয়েছি এবং তিনি তার একটি তালিকা করেছেন। দলগতভাবে এর নেতিবাচক ফলাফল উপস্থাপন করেছি। এবার এগুলো দূর করতে কৌশল জেনে আমাদের কাজ করার পালা।

সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা দূর করার কৌশল

অভিনয় ও আলোচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য অনেকগুলো কৌশল জানলাম। অনেকের ধারণা এগুলো দূর করা সম্ভব নয়। আসলে তা সত্য নয়। এই ক্ষেত্রগুলোতে আমরা পরিবর্তন আনতে পারি। শুধু দরকার আমাদের ইচ্ছাশক্তি ও উদ্যোগ। এর কারণ কী জানো? বিষয়টি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও একইসাথে মজার। তবে ইচ্ছা থাকা চাই। আমরা প্রত্যেকে আমাদের ভেতরের শক্তিকে উপলব্ধি করতে চাই। আমরা যখন নিজেকে ভালোবাসি না, নিজেকে ও অন্যকে সম্মান করি না, নিজের ক্ষমতা ও যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস রাখি না তখন নেতিবাচক কাজের মাধ্যমে নিজের শক্তি প্রকাশ করতে চাই। যেমন : যে নিজে ছবি ভালো আঁকে সে তার এই দক্ষতাকে অনুভব করতে চায়। সে চায় অন্যরাও তাকে ভালো বলুক, বাহবা দিক। অনেক সময় অন্যের আঁকা নিয়ে উপহাস করে বা আক্রমণ করেও কেউ কেউ নিজের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে চায়। কারণ সে নিজেই জানে না কীভাবে ইতিবাচকভাবে নিজের দক্ষতাকে অন্যের সামনে তুলে ধরতে হয়। এতে অন্যদের সাথে যেমন সম্পর্ক খারাপ হয়, তেমনি নিজের প্রতি সম্মানবোধও কমে যায়।

আমাদের আচরণগুলো আমরাই নির্বাচন করি। আমরা নিজেদের অনুভূতি, চিন্তা ও আচরণের প্রতি সচেতন হলে এবং নিজের প্রতি ভালোবাসা বাড়ালে আমাদের আচরণের প্রতিও সচেতন হই। সমবয়সীদের সাথে আমাদের সম্পর্কগুলো যাতে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ হয় তা খেয়াল করা গুরুত্বপূর্ণ, তাই না? হ্যাঁ, আর এজন্য চাই সম্পর্কগুলোর যত্ন। এবার আমরা সমবয়সী ও সহপাঠীদের সাথে সম্পর্কের যত্নের কৌশল সম্বন্ধে আরও ধারণা পাব।

আমরা নিজেরা অনেকগুলো কৌশল খুঁজে বের করেছি যা সবসময় চর্চা করতে পারি। নিচের তথ্যও আমাদের সহযোগিতা করতে পারে।

সীমাবদ্ধতা দূর করতে যেই কাজগুলো করব

সমবয়সী ও সহপাঠীদের সাথে সম্পর্কের যত্নে করণীয়

• একে অপরকে সম্মান করা 

• একসাথে খেলাধুলা ও সুন্দর সময় কাটানো 

• মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়ে তাদেরকথা শোনা 

• খোলামেলা ও সততার সাথে কথা বলা ও আচরণ করা 

• ভালো কাজের প্রশংসা ও স্বীকৃতি দেওয়া 

• নিজের জিনিসপত্র, চিন্তা, ধারণা শেয়ার করা 

• কোনো সমস্যা সমাধানে একসাথে কাজ করা 

• অন্যের সক্ষমতাকে সম্মান ও গুরুত্ব দেওয়া 

• প্রয়োজনে অন্যকে সহযোগিতা করা ও নিজের প্রয়োজনে সহযোগিতা চাওয়া 

• কথা দিলে তা রক্ষা করা। সম্পর্ক সবসময় একরকম যায় না। সম্পর্ক কখনো খারাপ হয়ে গেলেও বিশ্বাস ভঙ্গ না করা। বন্ধুর গোপন কথা গোপন রাখা। তার সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা এবং প্রয়োজনে অন্য কারও সহযোগিতা নেওয়া । 

• কেউ কোনো ভুল কাজ করলে ভালোবেসে ও সম্মানের সাথে তাকে সচেতন করা এবং তাকে দোষারোপ না করে তা সংশোধনে সাধ্যমতো চেষ্টা করা।

 

সীমাবদ্ধতা দূর করতে যেই কাজগুলো এড়িয়ে চলব

ওপরের কাজগুলো যেমন আমরা করব তেমনি নিচের কাজগুলো থেকে বিরত থাকব। এগুলো অন্যায় ও অপরাধ। এতে অন্যের মানবাধিকার ও মর্যাদা লঙ্ঘিত হয়। যার প্রতি এ আচরণ করা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা তার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকব

সহপাঠীদের চাপে পড়ে আমরা অনেক সময় অনেক কাজ করে ফেলি, যেগুলো নিজের বা অন্যের জন্য ক্ষতিকর। এধরনের চাপ বা প্রভাব থেকে দূরে থাকার জন্য আমরা নিচের কাজগুলো করতে পারি।

নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার উপায়

• নিজের মনকে প্রশ্ন করা এবং মন সায় না দিলে কাজটি না করা। 

• ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়কে আলাদা করতে পারা। 

কোনোকিছু করার আগে ভালোমতো চিন্তা করা, বিশ্লেষণ করা ও সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দক্ষতা অর্জন করা। 

• যা কিছু নিজের ও অন্যের জন্য ক্ষতিকর তাকে দৃঢ়, নমনীয় ও স্পষ্টভাবে ‘না' বলতে শেখা। 

• ইতিবাচক চিন্তা করে এবং সাহায্য করতে পারে এমন বন্ধুদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ করা। 

• নিজেকে দোষারোপ না করা এবং ভয় পেয়ে সমস্যা লুকিয়ে না রাখা। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য, শিক্ষক অথবা বিশ্বস্ত কেউ যে এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে তার সাথে আলোচনা করা; প্রয়োজনে সহায়তা চাওয়া। 

• প্রয়োজনে সেবা সংগঠনের সাথে যোগাযোগ ও সহায়তা গ্রহণ করা। সেবা প্রতিষ্ঠান হতে পারে সরকারি, বেসরকারি, এনজিওভিত্তিক যেমন : থানা, সমাজসেবা অফিস, হাসপাতাল, তথ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, নানা ধরনের সেবামূলক ক্লাব ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে ৯৯৯ জরুরি সেবা এবং শিশু সুরক্ষা বিষয়ক নম্বর : ১০৯৮। এই নম্বরে ফোন করলে যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলায় সাথে সাথে সাহায্য পাওয়া যায়। মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য রয়েছে ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার ফোন নম্বর 8802 8321825, 01713177175 

অনেকগুলো মজার মজার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সহপাঠী ও সমবয়সী নিয়ে নিজেদের ভালো থাকার উপায় আবিষ্কার করেছি। আমাদের সহপাঠীরা এই আবিষ্কারে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। এই সহপাঠীদের সাথে আমাদের অনেক দিনের বন্ধুত্ব। যাদের কাছ থেকে এরকম ইতিবাচক অভিজ্ঞতা লাভ করেছি আমাদের জীবনে তাদের অবদান অনেক, তাইনা? আমরা সহপাঠীদের সাথে প্রতিনিয়ত একসাথে পড়াশোনা, খেলাধুলা, গল্প করছি। একজন আরেকজনের কাছ থেকে শিখছি। আমাদের সমস্যায় ও প্রয়োজনে তারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। তারা পাশে আছে বলে আমরা স্বস্তি ও শান্তি পাচ্ছি। আমাদের প্রতি তাদের বিশ্বাস ও আন্তরিকতার কারণে আমরা নিজেদের আচরণ ও কাজ কতটা গ্রহণযোগ্য তা বুঝতে পারছি। আমাদের জীবনে এই অমূল্য অবদানের জন্য আমরা কি তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই? তাহলে চলো আমার কোনো একজন সহপাঠীর প্রতি আমার অনুভূতি জানিয়ে তাকে একটি চিঠি লিখি।

সহপাঠী ও সমবয়সীদের সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব, ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবগুলো আমরা জেনেছি। এই সম্পর্কের যত্নে কী করা উচিত এবং কী করা অনুচিত তাও আমরা ভেবে বের করেছি। এবার এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা ও চর্চার পালা।

এবার তাহলে শিক্ষকের নির্দেশনামতো ‘আমি পারি, আমরা পারি' ছকটি পূরণ করি।

                                                                                  আমি পারি, আমরা পারি

সীমাবদ্ধতা/ নেতিবাচক আচরণএটি দূর করতে আমি যা করবএটি দূর করতে আমরা সবাই মিলে যা করব
   
   
   
   
   

 

নিরাপদ সম্পর্ক চর্চা

এই অধ্যায়ের কাজগুলোর মধ্য দিয়ে সহপাঠী ও সমবয়সীদের সাথে নিরাপদ সম্পর্ক রক্ষায় ও যত্নে করণীয় জেনে নিজেদের জন্য পরিকল্পনা করেছি। এই বছরের বা কি সময় জুড়ে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করব। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ বা চর্চাগুলো ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করি। এছাড়া যখন আমার জন্য সুবিধামত প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট সময় নিজেকে দেব। এই সময়ে আমি আমার সারাদিনের কাজের ওপর প্রতিফলন করব। ইতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে শক্তি নেব। নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হলে নিজেকে নিজেকে আদর ও ভালোবাসা দেব। একটু সময় দিয়ে চিন্তা করব আমি নিজের কোন কাজে পরিবর্তন আনতে চাই কিনা, কারও কাছে থেকে সহযোগিতা নিতে চাই কিনা ।

নির্দিষ্ট সময় পরপর কাজের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষককে দেখিয়ে নেব। পাশাপাশি শিক্ষক নির্দিষ্ট সময় পরপর আমাদের সাথে শ্রেণিতে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। এভাবে চর্চা এবং মতবিনিময় বছর জুড়ে চলবে।

নিজের চর্চাগুলো ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করব এবং প্রতিফলন লেখার সময় নিচের প্রশ্নগুলোর আলোকে লিখব।

• গত একমাসে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কী কী কাজ করেছি?

• কাজগুলো করতে কেমন লেগেছে?

• কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি কি? হয়ে থাকলে কীভাবে তা মোকাবিলা করেছি?

• সহপাঠী ও সমবয়সীদের সাথে নিরাপদ সম্পক চর্চায় কী কী করেছি?

• এই কাজগুলো অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি ও রক্ষায় কীভাবে সাহায্য করছে?

• শিক্ষক বা পরিবারের কাছে কি আমার কোনো সাহায্য দরকার? তা কী?

আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন

নিচের ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমার অগ্রগতি সম্পর্কে আমি ধারণা লাভ করব। আমি নিজে আমাকে উৎসাহ দেব এবং কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। আমার অভিভাবক ও শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দেবেন। কী ভালো করেছি এবং কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। এর মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দেবেন। কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন।

শিখন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলো মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে তারকা বা স্টার দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।

                                                 ছক ১ : আমার অংশগ্রহণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে করা কাজ

সেশন নং অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে শ্রদ্ধাশীল আচরণঅংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্কের প্রতি সচেতনতা ও গুরুত্ববইয়ে সম্পাদিত কাজের মান
সেশন ১নিজের রেটিং   
মন্তব্য   
শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   

সেশন

নিজের রেটিং   
মন্তব্য   
শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   

সেশন

৩-১১

নিজের রেটিং   
মন্তব্য   

সেশন

১২

শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   

 

                                                                        ছক ২ : আমার নিরাপদ সম্পর্কচর্চা

 সহপাঠী ও সমবয়সীদের সাথে নিরাপদ সম্পকচর্চা সংক্রান্ত পরিকল্পনার যথাৰ্থতা

পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুশীলনগুলো জার্নালে লিপিবদ্ধকরণ

 

সহপাঠী ও সমবয়সীদের সাথে অনিরাপদ সম্পর্কের ঝুঁকি চিহ্নিত করেসহায়তা চাইতে পারা

 

নিজের রেটিং

 

 

  
মন্তব্য

 

 

  
অভিভাবকের মন্তব্য

 

 

  
শিক্ষকের রেটিং

 

 

  
মন্তব্য

 

 

  
Content added By
Promotion